নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি ভয়াবহ সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত ও আহত ৫০

নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি ভয়াবহ সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী কোচ কেয়া পরিবহনের সাথে নাটোর থেকে গুরুদাসপুরগামী যাত্রীবাহী লোকাল বাস অথৈ পরিবহনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। আহতদের চিকিৎসার জন্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নাটোর ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রাম মোড়ের আগে রেজুর মোড়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী কোচ কেয়া পরিবহন (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৫৬৫৬) একই দিক থেকে আসা অপর একটি ট্রাককে ওভারটেক করার সময় নাটোর থেকে গুরুদাসপুরগামী যাত্রীবাহী লোকাল বাস অথৈ পরিবহনের (সিলেট ব-৬৩৮৪) মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। 

কেয়া পরিবহন বাসের পিছনে প্রাইভেটকার নিয়ে আসা বড়াইগ্রামের ব্যবসায়ী মাজেদুল ইসলাম নয়ন বলেন, এ সময় বিকট শব্দে বাস দুটি মুখোমুখি সংঘর্ষের পর মহাসড়কের দুই পাশের দুটি গর্তে সিটকে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনার সময় রাস্তা ও আশে পাশে আহত-নিহতরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। দুর্ঘটনার শব্দে আর আহতদের আর্তচিৎকারে শত শত এলাকাবাসী উদ্ধার করতে ছুটে আসে। 

খবর পেয়ে নাটোর, লালপুর ও দয়ারামপুর ফায়ার সার্ভিস এবং থানা ও হাইওয়ে পুলিশ এলাকাবাসীর সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই গাড়ির চালকসহ ২৯টি লাশ উদ্ধার করে ট্রাকে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

আহতদের মধ্যে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের ভর্তি অজ্ঞাত আরও ৫ জন বিকালে মারা যায়। 

আহতদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল, বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বনপাড়ার বেসরকারি আমিনা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের ওপর একই দিন সকালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে থাকা সব হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রশাসনের অনুরোধে তাৎক্ষনিক আহতদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসেন। 

ঘটনার পরপরই নাটোর জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান, পুলিশ সুপার বাসদেব বনিক ও বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একরামুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

নিহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিক কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আওয়ামী লীগ নেতা জামাল হোসেন (৪০), তার মেয়ে জান্নাতী (৫), একই উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের আলাল উদ্দিন, সংগ্রামপুরের আব্দুর রহমানের স্ত্রী আতিকা বেগম, খোকসা গ্রামের কৃষ্ণ পদ সরকার (৫৫), ইন্দ্রাপাড়া গ্রামের জান মোহাম্মদ (৪৮), গুরুদাসপুর উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, তার এসও রেজাউল করিম, একই উপজেলার সিধুলী গ্রামের এবাদ আলী (৪৫), শরীফ উদ্দিন (৩০) লাবু, (৩৫), আলাল (৫৫), সোহরাব হোসেন, আয়নাল হক (৩৫), সতের আলী প্রামনিকের দুই ছেলে রব্বেল আলী (৪৫) ও আতাহার আলী (৫০), বৃচাপিলা গ্রামের বাবুল (৪০), আব্দুল আওয়াল (৩০), তেলটুপি গ্রামের আবু সাইদের মেয়ে মোহনা খাতুন (৫), কহির (৩৫), তোফজ্জল(৪৫), কিসমত (৪৫), আব্দুল কুদ্দুস (৬৬), আব্দুর রহমান(৫৫), রহমত (৫৫), শৈলেন তিলক (৫০), আবুল খায়ের (৬৫), আবু হানিফ(৪০), জকের আলী (৩৮) এবং অথৈ পরিবহনের চালক আলম হোসেন (৪০)। 

অথৈ পরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে বেশীর ভাগই সিধুলী গ্রামের ডা. ইয়ারুল ও আমিরুল ইসলাম জোড়া খুন মামলায় নাটোর কোর্টে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনায় অথৈ পরিবহনের বেশীর ভাগ যাত্রীই মারা গেছেন। 

নাটোর জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান সন্ধ্যায় বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে ২২টি লাশ উদ্ধার করে বনপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে। একই সময়ে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের ভর্তি ২০ জনের মধ্যে পাঁচজন এবং গুরুদাসপুর হাসপাতালে আরো একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি ফুয়াদ রুহানী বলেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ২২টি এবং বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আহত অবস্থায় ভর্তিকৃতদের মধ্যে পরে নিহত ৪ জনসহ মোট ২৬ জনের লাশ বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়। নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৫ জন এবং বড়াইগ্রাম হাসপাতালে ২ জন মারা যান। 

নাটোরের পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক জানিয়েছেন, নিহতের স্বজনদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে লাশগুলো হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান রাতে জানান, ঘটনার পরপরই যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে নাটোর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ও বিআরটিএ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামানকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

এ দিকে ঘটনা পরিদর্শন করতে রাতেই যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়েছেন। 

নাটোরের জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান জানান, রাত ১১টার দিকে যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন।

Comments

Social Share Icons

Popular Posts

শীঘ্রই বাংলাদেশও আমাদের হবেঃ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ

বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে নিউজটি ভুয়া ছিল স্বীকার করতে বাধ্য হলো ডেইলি স্টার

“শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আজ বড় বেশি মনে পড়ে” - তরিকুল ইসলাম (সাবেক মন্ত্রী)