প্রতিশোধস্পৃহার রাজনীতি(প্রথম পর্ব ) - সিরাজুর রহমান
বিবিসিতে চা চক্রে শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার নিচ্ছেন সিরাজুর রহমান |
প্রতিশোধস্পৃহার
রাজনীতি ( #PoliticalRevenge )
সিরাজুর
রহমান, প্রয়াত সাংবাদিক, বিবিসি বাংলা
বিভাগ
স্বপ্ন ও
স্বাধীনতা
স্বাধীনতা
সম্বন্ধে আমাদের স্বপ্ন দুর্ভাগ্যবশত
সঠিক হয়নি। পুরনো
কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই। গণতন্ত্রের
হত্যা এবং বাকশাল নামে
একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জের
ধরে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট একটা
নিবিড় আঁধারে ডুবে গেল
বাংলাদেশ। মুজিবের
দুই মেয়ে হাসিনা ও
রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। ভারতের
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দুই বোনকে
দিল্লিতে এনে রাজনৈতিক আশ্রয়
দেন। তাদের
তত্ত্বাবধানের ভার দেয়া হয়
ভারতের বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা
র-কে। দিল্লির
সুশীলসমাজের সাথে তাদের যোগাযোগের
সুযোগ বড় বেশি ছিল
না।
এ দিকে, পরপর কয়েকটি
রক্তঝরা সামরিক অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায়
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর
জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের
কার্যকর ক্ষমতা হাতে পান। বহু প্রমাণ
আছে
যে, জেনারেল জিয়াউর রহমান
গোড়ার মুহূর্ত
থেকেই
তিনি
হারানো
স্বাধীনতা
ও
গণতন্ত্র
পুনঃপ্রতিষ্ঠার
সঙ্কল্প
নিয়েছিলেন।
হাসিনা
ও
রেহানাকে
দেশে
ফিরিয়ে
আনার
কূটনৈতিক
উদ্যোগ
তিনি
কিছু
দিনের
মধ্যেই
নিয়েছিলেন।
শেষে
তিনি
পঞ্চম
সংশোধনী
মোতাবেক
সংবিধানে
নিষিদ্ধঘোষিত
আওয়ামী
লীগসহ
সব
রাজনৈতিক
দল
পুনরুজ্জীবিত
করার
পর
আওয়ামী
লীগের
সিনিয়র
ভাইস
প্রেসিডেন্ট
ড.
কামাল
হোসেন
ও
সাধারণ
সম্পাদক
আব্দুর
রাজ্জাককে
দিল্লি
পাঠিয়ে
দুই
বোনকে
দেশে
ফিরিয়ে
আনেন।
পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের এই
দুই নেতার দিল্লি সফরের
কথা শেখ হাসিনা অস্বীকার
করেছেন। কিন্তু
তার স্বামী, পরলোকগত পরমাণুবিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ আবদুল
ওয়াজেদ মিয়া তার স্মৃতিকথায়
সে সময় দিল্লিতে ড.
হোসেন ও আবদুর রাজ্জাকের
শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের কথা
উল্লেখ করেছেন। সমস্যা
এখানেই। নেতানেত্রীদের
কেউ কেউ বাংলাদেশের ইতিহাসের
অর্ধেক অস্বীকার করেন। অন্য
অর্ধেককে বাঁকা চোখে দেখেন। দেশে
ফেরার পর সদ্য বৈধঘোষিত
আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ
হাসিনাকে দলনেত্রী নির্বাচিত করতে বিলম্ব করেননি। পরের
বছর আওয়ামী লীগ থেকেই
বিবিসিতে আমাকে জানানো হয়
যে, নেত্রী শেখ হাসিনা
লন্ডন সফরে আসবেন।
স্থির করে ফেললাম, শেখ
হাসিনাকে তার পিতার মতো
বিশ্বমিডিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে
দেয়ার চেষ্টা করব।
প্রথমেই আমি তার সম্মানে
বিবিসির বুশ হাউজের কেন্দ্রীয়
বার্তাকক্ষে এক চা-চক্রের
আয়োজন করেছিলাম। উদ্দেশ্য
ছিল, আওয়ামী লীগ নেত্রী
বিবিসির সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে
মনখোলা মতামত বিনিময় করবেন।
বুশ হাউজে হাসিনার
সম্মানে
চা-চক্র
শেখ হাসিনা প্রায় দুই
ডজন সহচর নিয়ে বুশ
হাউজে হাজির হলে আমরা
হতাশ হয়েছিলাম। সহকর্মী
জন রেনার ও আমি
স্থির করলাম যে, আমরা
দু’জন নেত্রীকে অন্যদের
থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্টুডিওতে নিয়ে
যাবো এবং সেখানে সব
বিষয়ে তার মতামত জানার
চেষ্টা করব। প্রথমেই
শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেবেন জন রেনার। আলোচনার
সূত্রপাত তিনি করেছিলেন ইংরেজিতে
জন রেনার : শেখ
হাসিনা,
আওয়ামী
লীগের
সভানেত্রী
নির্বাচিত
হওয়ায়
আপনাকে
অভিনন্দন।
দলনেত্রী
হয়ে
আপনার
ভালো
লাগছে?
শেখ হাসিনা : (ইংরেজিতে)
না,
মোটেও
ভালো
লাগছে
না।
আমি
রাজনীতি
ভালোবাসি
না,
রাজনীতিকে
ঘৃণা
করি।
জন রেনার : (বিস্মিত
হয়ে)
তাহলে
আপনি
কেন
রাজনীতিতে
এলেন?
কেন
দলনেত্রী
হতে
গেলেন
আপনি?
শেখ হাসিনা : (ক্রুদ্ধ,
ইংরেজিতে)
ওরা
আমার
বাবাকে
খুন
করেছে,
আমার
মাকে
খুন
করেছে,
আমার
ভাইদের
খুন
করেছে,
তাদের
জন্য
কেউ
এক
ফোঁটা
চোখের
পানি
ফেলেনি।
আমি
তার
প্রতিশোধ
নেবো।
প্রতিশোধ
নেবো
বলেই
রাজনীতিতে
এসেছি।
চোখে চোখে জনের অনুমতি
নিয়ে স্টুডিও ম্যানেজারকে রেকর্ডিং বন্ধ করতে বলি। তারপর
বাংলায় নেত্রীকে বললাম, আপনি দলনেত্রী
হয়েছেন, আমরা আশা করব,
প্রধানমন্ত্রী হবেন আপনি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের প্রত্যাশা
অনেক। শুধু
প্রতিশোধ নিতেই মানুষ কেন
ভোট দিয়ে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী
করবে? তাদের সবার বাবা-মা তো খুন
হয়নি! শেখ হাসিনা জবাব
দেননি। কিন্তু
আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল
না যে, এরপর আমার
কোনো কথায় তিনি বিশ্বাস
করতে পারছেন না।
প্রতিটি কাজের
পেছনে
প্রতিশোধস্পৃহা
সে মুহূর্ত থেকে আওয়ামী লীগের
সব কথা ও কাজে
প্রতিশোধস্পৃহার লক্ষণ খুবই প্রকট। দুই বোন
দিল্লি
থেকে
ঢাকা
এসেছিলেন
১৯৮১
সালের
১৭
মে।
তার
১৩
দিনের
মাথায়
অত্যন্ত
জটিল
একটা
সামরিক
ষড়যন্ত্রে
রাষ্ট্রপতি
জিয়াউর
রহমান
নিহত
হন।
চট্টগ্রাম জেলার এক মাঠের
মধ্যে যেভাবে তার লাশ
লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল ধারণা
করা স্বাভাবিক যে, তার পরিচয়
বরাবরের জন্য গুম করে
ফেলাটাই ছিল উদ্দেশ্য।
চলবে...................
Comments
Post a Comment