অন্ধ ঘোড়ার পিঠে সরকার: কে নিরাপদ?
অন্ধ ঘোড়ার পিঠে সরকার:
কে নিরাপদ?
লেখক:
ড.এম মুজিবুর রহমান
অন্ধ ঘোড়ার পিঠে সরকার:
কে নিরাপদ?এক-এগারোর
অনিয়মতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার
পর প্রথম যে আঘাতটি
আসে তা হলো দেশের
সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীর
উপর।
চৌকস সেনা অফিসারদের হত্যা
করে নড়বড়ে করে
দেয়া হয় আমাদের ডিফেন্স
লাইন। এর
পরে অযোগ্য ও দলীয়
ক্যাডারদের বিচারক বানিয়ে ধ্বংস
করা হয় বিচার বিভাগের
প্রতিটি স্তরকে। হাজার
হাজার খাস কর্মী নিয়োগ
করে জনগণের প্রতিপক্ষই শুধু
নয় যমদূত বানিয়ে দেয়া
হয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে।
জনগণের
অর্থনীতি খেয়ে ফেলার জন্য
লুট করা হয় ব্যাংক
ও শেয়ার মার্কেট।
সংসদকে পরিণত করা হয়েছে
খিস্তি খেউর
ও প্রতিপক্ষের চরিত্রহননের আড্ডাখানায়। জাতীয়
অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি ধ্বংসে
খুলে দেয়া হয় পুরো
রাষ্ট্রীয় ভূমি ও আকাশ।
লোভ আর হুমকির খাঁচায়
বন্দী করা হয় দেশি মিডিয়া।
বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে
ঘায়েল করতে শুরু হয়
হত্যা গুম ক্রসফায়ার আর
চরিত্রহনন।
ইচ্ছেমত সংবিধান সংশোধন করে দল
ও পরিবারের মালিকানায় নিয়ে যাওয়া হয়
পুরোদেশ।
প্রাণভয়ে
কেউ কথা বলছেন না। পাঁচ
শতাংশ ভোটও পরেনি জাতীয়
নির্বাচনে।
দেশের
প্রায় সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্র
লীগের সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি।
সাংবাদিকসহ
সবাই জানেন সাগর রুনির
হত্যাকা-ের তদন্ত কেন
আজও শেষ হয় না। সরকারের
সমালোচনা করা হবে না
বলে উল্টো
সাংবাদিকদের দাসখত দিয়ে আসতে
হয়। মিডিয়ার
কাজ হলো দেশে ঘটমান
তথ্যগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া
যা এখন অসম্ভব প্রায়। সন্ত্রাস
দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা
মিডিয়ার সরাসরি কাজ নয়। জাতীয়
স্বার্থকে বাইরে রেখে সরকার
বিপদে পড়বে এই কথা
ভেবে তথ্য চেপে যাওয়া
সাংবাদিকের নীতিবিরুদ্ধ।
বিশ্ব
সাহিত্য কেন্দ্রের কারিগর আব্দুল্লাহ আবু
সায়ীদ সত্য উচ্চারণের পর
তাঁকে নিয়ে সংসদের প্রিভিলেজ
ব্যবহার করে খিস্তি খেউর
করা হয়। বর্তমান
বিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইডেনটিটি নোবেল
বিজয়ী ড. ইউনূসকে হেনস্থা
করতে এমন কিছু বাকি
নেই যা করা হয়নি।
প্রখ্যাত সাংবাদিক এবিএম মূসাকে অপমান
করা হয়। বিজ্ঞ
আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হককে মুই
কার খালু বলে ব্যাঙ্গ
বিদ্রুপ করা হয়।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামালকে মিথ্যাবাদী
বলে আখ্যা দেয়া হয়।
দেশের সুশীল সমাজকে পাগল
আর ক্যান্সারের রোগী বলে চুপ
থাকতে ধমক দেয়া হয়।
তাই এখন ভালো মানুষ
কেউ কথা বলতে চান
না। কারণ
তাঁরা মনে করেন কথা
বলতে গেলে অপমানিত হয়ে
লাভ কি? কথা
বলাটা অনেকেই ভলেন্টারি কাজ
মনে করছেন; তাই মান
সম্মানের ভয়ে চুপ থাকাকেই
নিরাপদ মনে করছেন সমাজের
এই সকল শ্রদ্ধাভাজনেরা। কিন্তু
আসলে কি তাঁরা নিরাপদ?
অনেকে
মনে করেন আওয়ামী লীগের
পর বিএনপি জোট আসবে
ক্ষমতায়; তাই লড়তে হয়,
মরতে হয় তারাই মরুক। আমাদের
সমস্যা নেই। আমরা যেমন আছি
এমন থাকব। আসলে কি তাই?
বর্তমান আন্দোলন শুধুমাত্র ক্ষমতার পালাবদলের জন্য নয়।
এ আন্দোলন আপনার আমার অস্তিত্ব
রক্ষার। এ
আন্দোলন বাঁচা মরার।
১৯৭১ সালে দেশের বীর
শহীদেরা যদি এমন চিন্তা
করতেন তাহলে কি দেশ
স্বাধীন হতে পারতো?
জনতার
সার্বভৌমত্ব আর ভোটের অধিকারটুকু
ফিরে পেতে আপনার আমার
কথা বলা কি দরকার
নয়? আমি আমার ভোটের
অধিকার ফিরে পেলে তখনই
কেবল রাজনৈতিক দলের ভুল ত্রুটিকে
বিচার বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাব
অথবা আমার ভোটের অধিকারের
মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার
অধিকার ফিরে পাব।
এ আন্দোলনতো বিএনপি জোটকে ক্ষমতায়
বসানোর আন্দোলন নয়, এ আন্দোলন
আপনার আমার অস্তিত্ব রক্ষা
ও ভোটের অধিকার ফিরে
পাবার আন্দোলন। আমাদের
মনে রাখতে হবে জাতীয়
অস্তিত্বের প্রশ্নে এবং নাগরিক অধিকার
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের পূর্বসূরিরা পাকিস্তানের
সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে
সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বলেই আমরা পেয়েছি
এক খন্ড স্বাধীন ভূমি। আজ আবারো
নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার
প্রশ্নে কি সরব হবো
না?
অনেকের
মত এখানে প্রখ্যাত জার্মান
লুথেরান যাজক ফ্রিড্রিশ গুস্তাব
এমিল মার্টিন নেমলারের বিখ্যাত উক্তিটি উল্লেখ না করলেই
নয়।
“যখন ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের
জন্য এসেছিলো, আমি কোন কথা
বলিনি, কারণ আমি কমিউনিস্ট
নই। তারপর
যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের
লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল,
আমি নীরব ছিলাম, কারণ
আমি শ্রমিক নই।
তারপর ওরা যখন ফিরে
এলো ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে ভরে
মারতে, আমি তখনও চুপ
করে ছিলাম, কারণ আমি
ইহুদি নই। আবারও
আসল ওরা ক্যাথলিকদের ধরে
নিয়ে যেতে, আমি টু
শব্দটিও উচ্চারণ করিনি, কারণ আমি
ক্যাথলিক নই। শেষবার
ওরা ফিরে এলো আমাকে
ধরে নিয়ে যেতে, আমার
পক্ষে কেউ কোন কথা
বলল না, কারণ, কথা
বলার মত তখন আর
কেউ বেঁচে ছিল না।”
বিখ্যাত
এই উক্তির মতো প্রতিদিনই
আমাদের কাউকে না কাউকে
‘ওরা’ ধরে নিয়ে যায়। আর
হদিস মেলেনা। কারো
হদিস না মিললেও
বে ওয়ারিস হিসেবে লাশ
ভাসে শীতলক্ষ্যা পদ্মা অথবা বুড়িগঙ্গায়। রাস্তার
ধারে। ব্রিজের
কাছাকাছি। আমরা
দেখি কিন্তু কথা বলি
না। কারণ,
যাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া
হচ্ছে তারা আমাদের কেউ
না। দেশে
‘ওদের’ এই ধরে নিয়ে
যাওয়ার শুরু অনেকদিন ধরেই।
সত্যি
যেদিন আমাদের সেই বোধ
জাগবে, সেদিন হয়তো পক্ষে
বলার মতো পাশে কাউকে
পাবো না। কি
পরিনতি আজ যুদ্ধে
জেতা স্বাধীন দেশের নাগরিকদের!
দুর্ভাগ্যজনক
হলেও সত্যি, বুশ প্রশাসনের
মত অন্ধ ঘোড়ার পিঠে
সওয়ার হওয়া আমাদের দেশের
সরকারের আচরণ “হয় আপনি
আমাদের পক্ষ, নয়তো আপনি
শত্রুপক্ষ।'' যে
কারণে আজ আর
কেউ নিরাপদ নয়।
নয় এমনকি সরকারের ঘরে
আসীনরাও। তখত
উল্টে গেলে তারাও অনিরাপদ
হয়ে পরবেন নাগরিকদের ক্ষোভের
অনলে। কেউই
মনে রাখে না অন্ধ
ঘোড়া কেবল পতনের দিকেই
ছুটে চলে।
(প্রকাশিত
মতামত একান্তই লেখকের নিজস্ব।
শীর্ষ নিউজের সম্পাদকীয় নীতির
আওতাভুক্ত নয়।)
http://www.sheershanews.com/2015/02/21/69963#sthash.PhKW4IJB.dpuf
Comments
Post a Comment