ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালতে প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি, র্যাব ও বিজিবি মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে বৃটিশ বাংলাদেশী তপন চৌধুরীর মামলা
প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি, র্যাব ও বিজিবি মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা |
muktobak24: বুধবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
বাংলাদেশে গণহারে রাজনৈতিক হত্যা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ রাখা এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘণের দায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইজিপি শহিদুল হক, র্যাবের ডিজি বেনজর আহমদ এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজকে বিচারের মুখোমুখি করতে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউমান রাইটস-এ মামলা দায়ের হয়েছে। লন্ডন ভিত্তিক গ্রন্থাগার শহীদ জিয়া স্মৃতিকেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়কারী, রাজনৈতিক সংগঠক ব্রিটিশ বাংলাদেশী শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন গত ৩০ জানুয়ারি এ অভিযোগ দায়ের করেন।
লন্ডন সময় মঙ্গলবার ২টায় হোয়াইটচ্যাপেলের একটি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মলেন মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া এবং অভিযোগের সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মামলার বাদী শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এম এ মালেক ও তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা এম এ সালাম। আরো উপস্থিত ছিলেন মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দীন, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিক, বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন, খসরুজ্জামান খসরু, সৈয়দ জাভেদ ইকবাল, এমাদুর রহমান, জিয়া পরিষদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল জলিল খান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লংঙ্ঘন, গুম, খুন, এবং বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড সহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চরম আকার ধারন করেছে। এসব মানবাধিকার বিরোধী কার্যক্রমের বিচার চেয়ে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউমান রাইটস এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে ভয়াবহ অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। গত বছর ৫ জানুয়ারী চরম বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য তথাকথিত নির্বাচন নামক প্রহসনের মাধ্যমে নির্বাচনী গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। প্রহসনের নির্বাচনের নামে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দখল দারিত্ব বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। মানুষের ভোটের অধিকার শুধু কেড়ে নেয়া হয়নি, সভা সমাবেশের অধিকারও হরণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক ঘোষণায় হত্যাকান্ডের মাধ্যমে এই সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠা নিয়ে রাস্তায় নামার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল প্রকাশ্যে। এই লগি বৈঠার দিয়ে কিভাবে রাজপতে পিটিয়ে মানুষ খুন করে উল্লাস প্রকাশ করা হয়েছিল সেটা সবাই জানেনে।
তিনি বলেন, পিতার মত শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছেন। হরণ করা হয়েছে ভোটের অধিকার। বিরোধী নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে টার্গেট হত্যা করা হচ্ছে। রাজপথে প্রতিবাদী মানুষের উপর গুলি চালানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে। আজো গনমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। সরকারের অন্যায় অবিচার নিয়ে লেখার কারনে গণমাধ্যম আজো বন্ধ করা হচ্ছে। বাকশাল আজ নতুন রুপে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলমন্ত্র ছিল গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় বিচার এবং মানুষের মানাবিক মর্যাদা। এর কোনটাই আজ বাংলাদেশে অবশিষ্ট নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেই তারা গণতন্ত্র হত্যার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। সামাজিক ন্যায় বিচারের পরিবর্তে এক ব্যক্তির ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে সর্বত্র।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, গত ৩ জানুয়ারী থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ। তার স্বাধীন চলাফেরার উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনকি তার ছোট ছেলের মৃত্যুর শোকে যখন তিনি কাতর তখনো জড়ানো হচ্ছে একের পর এক মিথ্যা মামলায়। চলমান আন্দোলন শুরু হওয়ার পর র্যাবের ডিজি বেনজির আহমদ, পুলিশের আইজি শহিদুল হক, বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ (শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের আপন বড়ভাই) রাজনৈতিক ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে গুলির হুকুম দিচ্ছেন তারা। রাষ্ট্রীয় টাকায় পরিচালিত এই বাহিনী গুলোর প্রধানদের এরকম বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। ৩টি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রধানের প্রকাশ্যে হুঙ্কারের পর ২০ দলীয় জোটের প্রায় ২৭জন নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আরো অনেক নেতা কর্মী এসব আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কতৃক গুমের শিকার হয়েছেন। বাড়িঘরে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অত্যাচারে শত শত নেতা কর্মী পুঙ্গু হয়েছেন। বাড়িঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, গত কয়েক দিন পূর্বে গোয়েন্দা সূত্রের উদ্বৃতি দিয়ে ৫০জন প্রবাসীর তালিকা কালের কন্ঠ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে,এবং এই পঞ্চাশ জন নেতা কর্মীদের পরিবারের সদস্যদেরও হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেছেন প্রবাসীদের যারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দেশে তাদের পরিবার পরিজনকে দেখে নেবেন। এমতাবস্তায় আমরা যারা বিরোধী দলের রাজনীতির সমর্থক এবং কর্মী তাদের জীবন চরম হুমকির মুখে। অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্গন ও হুমকির বিচারের দাবীতে একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে নিজের বিবেকের তাড়নায় অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশের আইজি শহীদুল, র্যাবের ডিজি বেনজির আহমদ, বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ-এর বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউমান রাইটস-এ শহীদ জিয়া স্মৃতি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছি। যাতে এদেরকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হলেও বিচারের আওতায় এনে বাংলাদেশে আইনের শাসন ও গনতন্ত্র পুন:প্রতিষ্টিত করা যায়। বাংলাদেশের আদালতে আজ ন্যায় বিচারের কোন সুযোগ নেই। বিচার ও আদালত চলে সরকারের ইচ্ছায়। সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে আদালতের রায়ে। কমনওয়েলথ-এর অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের ৩টি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় তাদের মানবাধিকার বিরুধী কার্যক্রম গুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে আমার এই মামলার মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশে রাজপথে লড়াইরত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষেদের কে আমরা জানিয়ে দিতে চাই যে আপনারা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সেই আন্দোলনে আপনারা একা নন। সরকারের নির্যাতনকারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই জনগনের গণতান্ত্রিক এবং মানবিক অধিকার গুলো সুরক্ষিত করাই আপনাদের দায়িত্ব। সভা সমাবেশ করা নাগরিকের অধিকার। এই অধিকার আপনারা হরণ করছেন। রাজপথে সভা সমাবেশ করতে গেলে প্রকাশ্যে গুলি চালাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক আইনে এই গুলির দায় আপনাকেই নিতে হবে। কেউ বিনা চ্যালেঞ্জে পার পাওয়া সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি মানবাধিকার বিরোধী কার্যক্রমের ছবিসহ ঘটনাবলী আমাদের সংরক্ষনে আছে। এই গুলো বিচারের সাক্ষী হিসাবে আপনাদের বিরুদ্ধেই যাবে।
সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এম এ মালেক বলেন, আজকের বাংলাদেশে শেখ হাসিনা যেভাবে হত্যা-গুম করছে একাত্তরেও এত ভীবিষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। এই অবৈধ সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে এটাই তাদের রাজনীতির শেষ মুহূর্ত। এভাবে করে শেখ হাসিনা টিকতে পারবে না। তাকে বিদায় নিতেই হবে। প্রবাসী রাজনীতিকদের বাংলাদেশে বসবাসকারী আত্মীয়দের হয়রাণি করার যে আওয়ামী লীগ হুমকি দিয়েছে তার নিন্দা জানিয়ে পাল্টা হুমকি দেন ইউেরাপভিত্তিক সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এম এ মালেক। তিনি বলেন, প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনদের ওপর কোনো ধরণের হয়রাণি হলে যারা প্রবাসে আওয়ামী লীগ করেন তারা কেউ সুস্থ্য থাকবেন, এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। রক্তপাত শুরু করলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, এই প্রবাসেই আওয়ামী গুন্ডাদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
মামলার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ সালাম বলেন, এই মামলায় মূলত: শেখ হাসিনা সহ বর্তমানে রাজনৈতিক হত্যার নির্দেশদাতাদের আসামী করা হয়েছে। সময়ের আবর্তে অাসামীদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এরকম আরো অনেক মামলা হবে বলে তিনি জানান।
Comments
Post a Comment