সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ: ৪ পত্রিকা ছাড়া বাকিরা পুলিশের সঙ্গে !
সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ: ৪ পত্রিকা ছাড়া বাকিরা পুলিশের সঙ্গে ! |
শিশির আব্দুল্লাহ:
Muktobak24 : Tuesday March 17, 2015
তথ্য
সুত্র : insightbd.com
বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি বর্তমানে দেশের প্রধান আলোচিত ইস্যু। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই হচ্ছে। এই লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবে (বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী) ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষায় পুলিশ নামে একটা পক্ষ আছেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি পক্ষ- মিডিয়া। সালাহ উদ্দিনের ঘটনায় দেশের জাতীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পত্রিকাগুলোর সংবাদ পরিবেশনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে- ‘বস্তুনিষ্ঠ’ তথ্য সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত মিডিয়ার ‘পুলিশপক্ষীয়’ ভুমিকা খুবই স্পষ্ট। তবে এই ইস্যুতে ব্যতিক্রম কিছু মিডিয়াও রয়েছে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে- দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, দৈনিক মানবজমিন এবং দৈনিক ইনকিলাব। উপরের এই পত্রিকাগুলোসহ ১৬ মার্চের উল্লেখ্যযোগ্য জাতীয় অন্য কয়েকটি পত্রিকা এবং ১৫ মার্চের অনলাইন পত্রিকাগুলো ভিজিট করে সালাহ উদ্দিন আহমদ সংক্রান্ত যাবতীয় সংবাদ ঘেঁটে যেসব বিষয় পাওয়া গেছে সেগুলো তুলে ধরা হল। এ ঘটনার সংবাদ কভারেজে পত্রিকাগুলোর মধ্যে তিন ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে-
এক.
ঘটনাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া এবং প্রয়োজনীয় সব পক্ষের বক্তব্য নিয়ে পূর্ণ ঘটনার একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, মানবজমিন এবং ইনকিলাবের প্রতিবেদনগেুলোতে এই প্রবণতা দেখা গেছে। এই চারটির তিনটিতে খবরটি লীড শিরোনাম হয়েছে এবং সবাই নিজস্ব সূত্র ব্যবহার করে পুলিশের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত ভাষ্য প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পেয়েছে এবং ছাপিয়েছেও।
দুই.
ঘটনাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া তবে এর মাধ্যমে পুলিশের বা সরকারের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করা: যেমন- জনকণ্ঠ, যায়যায়দিন এবং যুগান্তর। এইখানের প্রথম দুটি পত্রিকা লীড শিরোনাম করেছে এবং যুগান্তর তিন কলামে প্রথম পাতায় ছাপিয়েছে। তবে জনকণ্ঠের “সালাউদ্দিন হাওয়া?” এই শিরোনামের সাথে পুলিশের বক্তব্য দিয়ে যে ‘ইনসার্ট’ দেয়া হয়েছে তাতে ঘটনার পুলিশি ভাষ্য প্রতিষ্ঠিত করা চেষ্টা পরিস্কার। ভেতরেও সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদের কিছু বক্তব্য দেয়া হলেও তার পাল্টা হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের পুলিশের রিপোর্ট থেকে দেয়া হয়েছে। নিজেদের রিপোর্টারের সংগ্রহ করা নয়। যুগান্তর’র শিরোনাম “মেহমানদের সঙ্গে নিরুদ্দেশ সালাহ উদ্দিন!” এবং যায়যায়দিন’র শিরোনাম ও ভেতরের বক্তব্য পুরোপুরি পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী। হাসিনা আহমদ বা কোন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য নেই। অনলাইনের মধ্যে প্রধান দুটি পত্রিকা বিডিনিউজ এবং বাংলানিউজও এই ক্যাটাগরিতে সংবাদ করেছে। বাংলানিউজ- এর ১৫ তারিখ একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল- ‘সালাহউদ্দিন সেখানে ছিলেনই না!’। শিরোনামের বক্তব্যটিকে পুরোপুরি পুলিশের বক্তব্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা ছিল রিপোর্টটিতে। বিডিনিউজ- এর এ সংক্রান্ত সংবাদটির শিরোনাম ছিল- “সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে এসে পুলিশ বলল রায়হানের নাম”। এই বক্তব্যটা পুলিশের রিপোর্টে আছে। সেখান থেকেই বিডিনিউজ শিরোনাম করেছে। (নীচে পুলিশের বক্তব্য সংযোজন করে দেয়া হয়েছে।)
তিন.
বাকি পত্রিকাগুলোর পলিসি ছিল ঘটনাটিকে বেশি গুরুত্ব না দেয়া। যেমন- সমকাল, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্তেফাক এবং যায়যায়দিন। এই পত্রিকাগুলো সবাই প্রথম পাতায় সিঙ্গেল কলামে আদালতে জমা দেয়া পুলিশের রিপোর্ট থেকে বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। কেউ হাসিনা আহমদের কোন বক্তব্যই দেয়নি প্রতিবেদনে আবার কেউ ‘স্ত্রী ও বিএনপি অভিযোগ তাকে পুলিশ বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে’ বলে ক্ষান্ত দিয়েছে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরির পত্রিকাগুলোর মতো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের কোন প্রসঙ্গই ছিল না এই পত্রিকাগুলোতে। দৈনিক নয়া দিগন্ত নামের বিএনপি-জামাতপন্থী বলে পরিচিত পত্রিকাটিকে এই ক্যাটাগরির অধীরে একটি সাব-ক্যাটাগরিতে ফেলা যেতে পারে। প্রথম পাতায় আদালতে শুধু পুলিশের জমা দেয়া রিপোর্ট নিয়ে তিন কলাম একটি সংবাদ ছিল। এর পাশে পত্রিকাটির প্রধান অপরাধ প্রতিবেদকের তৈরি দুই কলামের আরেকটি সংবাদ ছিল “পাঁচ দিয়েও সন্ধান মেলেনি” শিরোনামে। কিন্তু এতে কোন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য নেননি প্রতিবেদক (যেমন প্রথম ক্যাটাগরির চার পত্রিকা নিয়েছে)। শুধু বিএনপি এবং ভিকটিমের স্ত্রীর (যিনি প্রত্যক্ষদর্শী নন) অভিযোগ দিয়ে রিপোর্টটি তৈরি!)।
কে কী বলছে?
নিখোঁজের ৫ম দিন ১৫ তারিখ (রোববার) হাইকোর্টের একটি রুলের জবাবে আদালতে আইনশৃংখলা বাহিনী (পুলিশ/র্যাব/বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা) যৌথভাবে নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে তাদের চেষ্টা এবং তার ভিত্তিতে পাওয়া ফলাফলের বিবরণ তুলে ধরে। তাদের সেই বিবরণ বা রিপোর্টের মূল কথাগুলো “দৈনিক জনকণ্ঠ” এর “সালাউদ্দিন হাওয়া?” শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করছি- “পুলিশের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘জিজ্ঞাসাবাদে দারোয়ান আকতার জানান, চার দিন আগে হাসনাত সাহেব সস্ত্রীক বাসা থেকে গিয়েছেন। যাওয়ার সময় রায়হান নামে একজন পুরুষ মেহমান রেখে যায়। হাসনাত সাহেব দারোয়ানদের বলে যানÑ তাদের অনুপস্থিতিতে মেহমান বাসায় থাকবেন। আকতার আরও জানান, বাসায় রাত এগারোটা পর্যন্ত ভাড়াটিয়ারা গাড়ি নিয়ে যাওয়া-আসা করে। ১০ মার্চ অনুমান ৯টার দিকে পাঁচ মেহমান হাসনাত সাহেবের বাসায় আসেন। ওই ফ্ল্যাটের দরজা নক করার পর ভেতর থেকে দরজা খুললে তারা ভেতরে ঢোকে। আনুমানিক আধাঘণ্টা পর উনি বাসায় আসা লোকদের সঙ্গে গাড়িতে উঠে চলে যান। ওই লোকটি সালাউদ্দিন কিনা সেটা তাঁরা জানেন না।’প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাসায় আসা লোকদের গায়ে কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক ছিল না। তাদের কাছে কোন অস্ত্রও তারা দেখতে পায়নি। বাইরে অপেক্ষমাণ গাড়ি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ির মতো মনে হয়নি। মেহমানের হাতে কোন হাতকড়া ছিল না। তাকে জোর করে নেয়া হচ্ছে বলেও মনে হয়নি।’পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এখান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কাউকে ধরে নিয়ে গেছে, এমন তথ্য তাদের জানা নাই।” পুলিশ রিপোর্টে এই বক্তব্য সব পত্রিকা প্রায় হুবহুই ছাপিয়েছে। তবে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, মানবজমিন বাদ দিয়ে বাকি কোন পত্রিকাই পুলিশের বক্তব্যের বিপরীতে ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী বক্তব্য দেয়নি।
৩ পত্রিকাকে প্রত্যক্ষদর্শীরা কী বলেছেন?
প্রথম আলো থেকে উদ্ধৃত–
“তবে গত বৃহস্পতিবার আখতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টার দিকে বেশ কয়েকটি গাড়ি নিয়ে একদল লোক ওই বাসার সামনে আসেন। বাসার সামনে তিনটি গাড়ি ছিল। কিছুক্ষণ পর রাত ১০টা নাগাদ তাঁরা এসে বলেন, ‘আমরা ডিবির লোক। কোনো সমস্যা নেই।’ পকেট গেট খোলা ছিল। তাঁরা কয়েকজন সেই গেট দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে পড়লে আখতারুল জিজ্ঞেস করেন, ‘কী কারণে আসছেন?’ তাঁরা বলেন, ‘পরে জানতে পারবি।’
ওই সময় আখতারুল আরও বলেন, এ সময় দুজন তাঁকে ‘চটকনা’ দেন। তাঁদের কাছে পিস্তল দেখে ভয় পান আখতারুল। তাঁরা নিজেদের ডিবির লোক বলে পরিচয় দেন এবং আখতারুলকে ‘চুপ করে বইসা থাক’ বলে কয়েকজন দোতলায় চলে যান। লোকগুলো এরপর ২০-২৫ মিনিট ছিলেন। নামার সময় চোখ বাঁধা অবস্থায় দুজন দুই পাশে ধরে তাঁকে (সালাহ উদ্দিন) নিয়ে নেমে যান। পরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে চলে যান অস্ত্রধারীরা।
আশপাশের আরও তিনটি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরাও মনে করেন, ১০ মার্চ রাতে গাড়িতে করে আসা অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।”
ডেইলি স্টারও আখতারের বরাতে—
“Around 9:40pm on March 10, some
20-25 people in six microbuses went to the house on Road 13/B at Uttara
Sector-3 where Salahuddin had been staying for four days, said Akhterul,
caretaker of the building.
They parked two vehicles on both
ends of the road and four in front of the house. Six to seven plainclothes men
then entered the building at about 10:05pm, he told reporters yesterday.
“One of them slapped me when I
asked them about the purpose of their visit. Some of them showed identity cards
claiming they are DB police personnel.” They then went to the first floor of
the building, he said.
Around half-an-hour later, they
came down escorting a man, who was blindfolded with hands tied behind his back.
“I knew the man is a BNP leader. I saw him many times on TV. He came to this
house four days ago,” said Akhterul.”
মানবজমিন যা জানিয়েছে অন্য দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে তা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সাথে প্রায় মিলে যায়। আর ইনকিলাব প্রতক্ষ্যদর্শীর কোন বক্তব্য দিতে না পারলেও পত্রিকাটি পুলিশের বক্তব্যের সাথে ভারসাম্য করে হাসিনা আহমদের এবং বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে “ইলিয়াসে পথে সালাহ উদ্দিন?” শিরোনামে লীড নিউজ করেছে।
Comments
Post a Comment