নিশা দেসাই ও ড্যান মজিনাকে নিয়ে মন্ত্রীর বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য-বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে

ঢাকা, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪
amarbanglanews24দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিসওয়াল ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে নিয়ে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের করা বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পরিকল্পিত বৈঠকটি অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্ভাব্য উচ্চ বা শীর্ষপর্যায়ের সফর পরিকল্পনাও বাতিল হয়ে যেতে পারে। সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, গত অক্টোবরে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের অংশীদারিত্ব সংলাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল, ঢাকা সফরে আসা আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সরকারের দায়িত্বশীলপর্যায় থেকে করা মন্তব্যে তা হোঁচট খেয়েছে। অংশীদারিত্ব সংলাপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিসওয়াল ঢাকায় এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের ভিত্তি তৈরির জন্য কাজ করেছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের পরই মাহমুদ আলীর ওয়াশিংটন সফর নিয়ে কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন কোন মুখে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে বিসওয়ালের সাথে আলাপ করবেন? নিশা দেসাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের প্রধান। বাংলাদেশের ব্যাপারে তার মনোভাব দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে ‘দুই আনার মন্ত্রী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকার কী অর্জন করতে চাচ্ছে তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঢাকায় নিশা দেসাই বিসওয়ালের সফর চলাকালে গত শনিবার সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ খুলনায় সার্কিট হাউজ ময়দানে নগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রকাশ্যে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুই আনার মন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনাকে তিনি ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’ বলে বিদ্রুপ করেছেন। কর্মকর্তারা বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করাতেই বিসওয়াল ও মজিনার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে সরকার। আর তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যে। অথচ খোঁজ নিলে জানা যাবে খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠকে বিসওয়াল বেশ কড়া কথাই বলেছেন। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তারা যেখানেই যান সরকার ও বিরোধী দলগুলোর সাথে আলোচনা করেন। এটিই গণতন্ত্রের হোমওয়ার্ক। কর্মকর্তারা বলেন, সরকার এক দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে, অন্য দিকে ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের দিয়ে বিরূপ মন্তব্য করাচ্ছে। দু’টি তো একসাথে চলতে পারে না। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, বিদেশসংক্রান্ত বিষয়ে কেবল পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা সচিব কথা বলবেন। কেননা, এর ধকলটা তাদেরই সামলাতে হয়। তারা বলেন, সরকার বিব্রত হবে এ চিন্তা করে অংশীদারিত্ব সংলাপের পর দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র বা মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি কথাও বলেনি। তারা বরং সামরিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা বলেছে। কিন্তু এর পরও বিসওয়াল বা মজিনা সম্পর্কে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে সম্পর্কে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকার কল্পনা করা কঠিন। কেবল সৈয়দ আশরাফ নন, এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক নানা মন্তব্য করেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সংলাপে বসার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির লেখা চিঠির কোনো জবাব দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেননি। অথচ একই সময়ে ইউএনজিএতে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাওয়া ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাথে হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন জন কেরি। আর তার পরের মাসেই অর্থাৎ অক্টোবরে নওয়াজ শরিফকে হোয়াইট হাউজে বৈঠকের জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

Comments

Social Share Icons

Popular Posts

শীঘ্রই বাংলাদেশও আমাদের হবেঃ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ

বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে নিউজটি ভুয়া ছিল স্বীকার করতে বাধ্য হলো ডেইলি স্টার

“শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আজ বড় বেশি মনে পড়ে” - তরিকুল ইসলাম (সাবেক মন্ত্রী)