“আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস: পরিস্থিতি উদ্বেগজনক”

“আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস: পরিস্থিতি উদ্বেগজনক”
Muktobak24: ঢাকা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বার ,২০১৪
উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনও হরহামেশা দিন-দুপুরে গুম-খুনের শিকার হচ্ছেন মানুষ বছরের পর বছর ধরে যারা গুম হয়ে আছেন তাদের উদ্ধারে কোন তৎপরতা নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোন কোন ক্ষেত্রে মাস খানেক নিখোঁজ থাকার পর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাজির করা হচ্ছে ক্রসফায়ারও চলছে সমানতালে এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকার পরও কথিত ক্রসফায়ারে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় আসামির ওপর নির্যাতন হচ্ছে নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা শক্তিপ্রয়োগের ঘটনা ঘটছে অহরহ ধরে নিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলির ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই নিরপরাধ মানুষকে বানানো হচ্ছে সন্ত্রাসী সীমান্তেও চলছে সমানতালে খুন-অপহরণ নারীর প্রতি সহিংসতার বিকৃত বীভৎস ঘটনা ঘটছে একের পর এক থানা পুলিশের কাছে সুবিচার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে মানবাধিকার কর্মী বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বর্তমানে উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে যদিও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান . মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, কমিশনের ভূমিকার কারণে গুমের ঘটনা কমেছে কমিশনের সব কাজ দৃশ্যমান নয় অন্তরালে থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন তারা তিনি বলেন, মানবধিকার পরিস্থিতি ওঠানামা করে কখনও গুমের ঘটনা বেড়ে যায় আবার কখনও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনা বেড়ে যায় তবে পরিস্থিতি আগের চেয়ে পরিবর্তন হচ্ছে আইন সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সুলতানা কামাল গত রাতে বলেন, সরকার কর্তৃক কিছু কিছু মানবধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিচ্ছে, যা কাম্য নয় অবস্থা এমন হয়েছে যে, মানুষের মনে শঙ্কা জেগেছে তারা যদি কারও দ্বারা লাঞ্ছিত হয় তাহলে বিচার পাবে না রাষ্ট্রকে মানবাধিকার বিষয়ে আরও বেশি সচেতন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে এদিকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরুতে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে হারে গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে তা বর্তমানে একটু কমে এসেছে ঠিকই, তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে জবাবদিহি নেই তারা অনেকটা খেয়াল-খুশিমতো কাজ করছে একমাত্র নারায়ণগঞ্জের সাতজনকে গুম খুনের ঘটনা ছাড়া অন্যকোন গুম-খুনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়নি দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই ধরে নিয়ে পায়ে গুলির ঘটনা ঘটছে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এক পুলিশ কর্মকর্তা পরকীয়ার জের ধরে এক যুবককে পায়ে গুলি করে সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচিত হলে ওই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় সম্প্রতি ঢাকা বরিশালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা নারী শিক্ষার্থীদের লাথি মারার দৃশ্য দেখা গেছে কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম-খুনের ঘটনাগুলো চরম মানবধিকার লঙ্ঘন বলে ধরা হয় কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম খুনের এসব ঘটনার বেশির ভাগেরই কোন তদন্ত করা হচ্ছে না এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গুম-অপহণের ঘটনায় থানা পুলিশ মামলা বা জিডি নিতে চায় না ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সবসময় নিখোঁজ হিসেবে থানায় জিডি করতে পরামর্শ দেয়া হয় কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কোন তদন্ত করা হয় না বললেই চলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিবর্তনমূলক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ (সংশোধিত ২০০৯ ২০১৩) এর মাধ্যমে সরকার মানবাধিকার রক্ষাকর্মী, সাংবাদিক স্বাধীনচেতা মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলায় ভিন্ন মতাবলম্বীদের গ্রেপ্তারের পর কারাদ- দেয়া হয়েছে এছাড়া গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংবাদ অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে মানবধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য মতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাসে সারা দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যকা-ের শিকার হয়েছেন ১৬২ জন এর মধ্যে কথিত ক্রসফায়ারে মারা গেছেন ১১০ জন, নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩৮ জন, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে জনকে গত ১১ মাসে ৩৭ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন যার মধ্যে গত এপ্রিল মাসেই গুম হয়েছেন ১৮ জন চলতি বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর হাতে ৩৩ জন নিহত ৬১ জন আহত হয়েছেন এছাড়া ৯৮ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন জেল হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৮১ জন নিহত হাজার ৭৫২ জন আহত হয়েছেন যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৩৭ জন নারী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬১০ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৬০ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৬৪ জন গত এগার মাসে সারা দেশে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন ১১০ জন ব্যক্তি আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৩৬ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন এর মধ্যে গ্রেপ্তার ছাড়া ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৭০ জন আর গ্রেপ্তারের পর ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৪৮ জন সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত অন্তত ৭২০৪ জন আহত হয়েছেন আসকের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৮২ জন গুমের শিকার হয়েছেন এর মধ্যে ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে ১০ জনকে অপহরণের পর সাত জনকে ্যাব গ্রেপ্তার দেখিয়েছে, এক জনকে থানায় দুজনকে কারাগারে পাওয়া গেছে এই সময়ে সারা দেশে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ৯৫ জন জেল হেফাজতে মারা গেছেন ৪৪ জন জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন ২৭ জন, আহত হয়েছেন ৫৪ জন, অপহরণের শিকার হয়েছেন ৯১ জন অপহরণের পর ফিরে এসেছেন ৪৮ জন আইন সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমাবনিত হচ্ছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে আরও বেশি যুক্ত হয়ে পড়ছে ফলে সাধারণ মানুষকে ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে তিনি বলেন, বিরোধী মতপোষণকারীদের সমালোচনা সরকার স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না ফলস্বরূপ নানা ধরনের আইন-কানুন তৈরি করে বিভীষিকাময় একটি পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে নূর খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে জবাবদিহি নেই ফলে তাদের হাতে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হচ্ছে বিরোধীদের যৌক্তিক কোন মতামতকেও গ্রহণ করা হচ্ছে না এটি গণতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া বিতর্কিত এই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ক্ষমতাসীনদের হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে এছাড়া সংখ্যালঘু নাগরিকদের ওপর হামলা নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাও অব্যাহত আছে সরকার সমর্থিত ছাত্র যুব সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যুবলীগ রাজনীতিতে সহিংসতা দুর্বৃত্তায়নের মূল কেন্দ্রে অবস্থান করছে মত প্রকাশ সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বিবৃতিতে বলা হয়, সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে এবং নিবর্তনমূলক ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংসদ সদস্যদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে অধিকার মনে করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটাতে বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত হওয়া এবং সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই তাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিটি মানবাধিকার কর্মীসহ জনগণকে সোচ্চার হতে হবে এবং ভিকটিম পরিবারগুলোসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে অধিকার

Comments

Social Share Icons

Popular Posts

শীঘ্রই বাংলাদেশও আমাদের হবেঃ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ

বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে নিউজটি ভুয়া ছিল স্বীকার করতে বাধ্য হলো ডেইলি স্টার

“শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আজ বড় বেশি মনে পড়ে” - তরিকুল ইসলাম (সাবেক মন্ত্রী)